নীরবতা ভেঙে, ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন হাসিনা

ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাচ্যুতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে নীরবতা ভেঙেছেন। কয়েকদিন আগে ভারত সরকার জানিয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পেছনে বিদেশি হাত থাকতে পারে বলে তারা বিশ্লেষণ করছে।
শনিবার আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ও বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিলে আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।
হাসিনা সরকার বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখেছে। এ বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, বিমানঘাঁটির বিনিময়ে ‘একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি’ তাকে মসৃণভাবে ক্ষমতায় ফেরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা তার সর্বশেষ বিবৃতিতে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ ধরনের বিদেশি শক্তি যেন ‘ব্যবহার’ না করে সতর্ক করে দেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতি মনোযোগী চার সদস্যের এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনজনের সমন্বয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ বৃহস্পতিবার রাতে শপথ গ্রহণ করেছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘লাশের মিছিল যাতে আমাকে দেখতে না হয় সেজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। তারা আপনাদের (ছাত্রদের) সংগঠনের ওপর ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, আমি তা হতে দিইনি। আমি শক্তি নিয়ে এসেছি’, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘হয়তো আজ আমি যদি দেশে থাকতাম তাহলে আরও প্রাণ যেত, আরও সম্পদ নষ্ট হতো।
আগামী সপ্তাহে ভারতে থাকাকালীন তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ছাত্র বিক্ষোভে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর ওয়াশিংটন বাংলাদেশে ‘একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের রূপরেখা’ তৈরি করবে বলে আশা করছে।
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া নোবেল বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। উইকিলিকসের তারবার্তা অনুযায়ী, অতীতে তিনি মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করেছেন এবং বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা নিয়ে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী।
‘শিগগিরই ফিরব’
সমর্থক ও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় পরাজয় মেনে নিলেও দেশে ফেরার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
শিগগিরই ফিরবো ইনশাল্লাহ। পরাজয় আমার, কিন্তু বিজয় বাংলাদেশের জনগণের।
“আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি, আমি তোমার বিজয় নিয়ে এসেছি, তুমি আমার শক্তি ছিলে, তুমি আমাকে চাওনি, আমি নিজেই চলে গেলাম, পদত্যাগ করলাম। আমার যে কর্মীরা আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে।
জনগণ তার বক্তব্য বিকৃত করছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
আমি আমার তরুণ শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কখনো তোমাদের রাজাকার বলিনি। আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। আপনার বিপদের সুযোগ নিয়েছে একদল মানুষ। ‘ বার্তায় বলেন তিনি।
‘রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশে অবমাননাকর বলে মনে করা হয় কারণ এটি ‘স্বেচ্ছাসেবীদের’ বোঝায় যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করেছিল। দি প্রিন্ট